‘নিতাই পদ-কমল, কোটি চন্দ্র সুশীতল, যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায়’
নিত্যানন্দ প্রভু করুণার সাগর। তাঁর পদছায়া-সংস্পর্শে জীবের সংসার-দাবানলের তাপ শীতল হয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও তাঁর বিভিন্ন পার্ষদের কেউ বঙ্গদেশে আবির্ভূত হন এবং কেউ ভারত ভূমি পরিভ্রমণকালে বঙ্গদেশে আগমণ করেন। কিন্তু নিত্যানন্দ প্রভুর পূর্ববঙ্গে আগমনের কোনো ইতিহাস জানা যায় না। ইতোপূর্বে পাদুকাযুগল বিভিন্ন দেশে গমনপূর্বক ভক্তদের কৃপা বিতরণ করলেও পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের মানুষকে কৃপা বিতরণ করবার জন্য এই প্রথমবার শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পাদুকাযুগল বাংলাদেশে আগমন করেন। শ্রীমায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দিরে শ্রীশ্রীপঞ্চতত্তোর সঙ্গে সেবিত এই পাদুকাযুগল স্বয়ং শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর প্রতিনিধিস্বরূপ।
পাদুকাযুগল নিয়ে আগমন করেন শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ, ইস্কন জিবিসি ও দীক্ষাগুরু, শ্রীল ভক্তিপুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ, ইস্কন জিবিসি, শ্রীপাদ ব্রজবিলাস দাস, পরিচালক, অর্থ মন্ত্রণালয়, টিওভিপি। পাদুকাযুগল প্রথমে শ্রীহট্ট তথা সিলেট পরিভ্রমণ করে। সেখানে ইস্কন সিলেট মন্দিরে তদুপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। পরবর্তী দিন পাদুকাযুগল ঢাকার স্বামীবাগ আশ্রমে আগমন করলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামে মহাসমারোহে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাদুকাযুগল বিজয় করেন। প্রতিস্থানেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পাদুকার মহাসমারোহে অভ্যর্থনা ও মহাঅভিষেক সুসম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পুণ্য আবির্ভাবভ‚মি শ্রীমায়াপুর ধাম অভিন্ন বৃন্দাবন। বিভিন্ন বৈদিক শাস্ত্রে তাকে গুপ্ত-বৃন্দাবন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গৌড়ীয়বৈষ্ণব পরম্পরায় সমস্ত আচার্যই শ্রীধাম মায়াপুরের প্রতি সেবানিবেদন করেছেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেছেন, “যারা শ্রীধাম মায়াপুরের উন্নয়নকল্পে সর্বোত্তমভাবে চেষ্টা করছেন, তারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বৈষ্ণবগণের কল্যাণকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন।”
শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু শ্রীল জীবগোস্বামীর নিকট মায়াপুর-নবদ্বীপ ধামের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে,
“অদ্ভুত মন্দির এক হইবে প্রকাশ, গৌরাঙ্গের নিত্যসেবা পাইবে বিকাশ ”
শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর সেই ভবিষ্যৎবাণী সার্থক করতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপা শ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ শ্রীমায়াপুর ধামে সেই অদ্ভুত মন্দির প্রতিষ্ঠাকার্য শুরু করেন, যা সারাবিশ্বের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রস্থলরূপে প্রকাশিত হতে চলেছে। ‘টেম্পল অব বৈদিক প্লানেটরিয়াম’ বা ‘বৈদিক তারামল মন্দির’ নামে আখ্যায়িত মূল মন্দিরটি সাতলক্ষ বর্গফুট ভমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের সব থেকে বৃহৎ তথা সেই অদ্ভুত মন্দির তৈরিতে বিশ্বব্যাপী ভক্তদের অংশগ্রহণ করানোর উদ্দেশ্যে নিত্যানন্দ প্রভুর প্রতিনিধিস্বরূপ পাদুকাযুগল আগমন করেন।