শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর প্রিয় দ্বাদশ গোপালের অন্যতম শ্রীল সুন্দরানন্দ ঠাকুর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর গ্রামে আবির্ভূত হন। সেখানেই তাঁর শ্রীপাট। নিকটেই বেত্রবতী নদী। এ নদী সম্পর্কে কিছু স্থানীয় কিংবদন্তি রয়েছে। বেত্রবতী নামে এক বৃদ্ধা এ শ্রীপাটে থাকতেন। তিনি একবার গঙ্গাস্নানে যাত্রীদের কাছে মা গঙ্গার জন্য একটি ফুলের মালা পাঠান। কিন্তু তাঁরা সেটা অর্পণ করতে ভুলে যান। তাই আসার পথে একটি জলাশয়ে মালাটি নিক্ষেপ করতেই গঙ্গাদেবী স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে মালা গ্রহণ করেন। এতে তাঁরা আশ্চর্যান্বিত হন। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে তাঁরা শ্রীপাটে আসেন। কিন্তু সেই বৃদ্ধা দৌড়ে পালিয়ে যান। তিনি যেই পথে গিয়েছিলেন, সেই পথটি ছোট নদীর আকার ধারণ করে। এখনো সেই নদীর কিছু স্মৃতি রয়েছে।
শ্রী গৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় বলা হয়েছে- পুরা সুদামনামাসীদদ্য ঠক্কুর সুন্দরঃ। ১২৭
অর্থাৎ পুরাকালে যিনি সুদাম নামক গোপাল ছিলেন, তিনি এক্ষণে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে খ্যাত। দ্বাদশ গোপালেরা সব সময় ব্রজভাবে মগ্ন থাকতেন এবং বিবিধ অদ্ভুত লীলাবিলাস করতেন। তন্মধ্যে সুন্দরানন্দ ঠাকুর ছিলেন প্রেমরসসমুদ্র।
প্রেমরস সমুদ্র সুন্দরানন্দ নাম।
নিত্যানন্দস্বরূপের পার্ষদ প্রধান \
(চৈ.ভা. অন্ত্য ৫/৭২৮)
সুন্দরানন্দ নিত্যানন্দের শাখা, ভৃত্য মর্ম।
যাঁর সঙ্গে নিত্যানন্দ করে ব্রজ নর্ম \
(চৈ.চ. আদি ১১/২৩)
তিনি তেজস্বী ও অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। যেমন তিনি প্রেমোন্মত্ত অবস্থায় জল হতে কুমীর ধরে আনতেন-
সুন্দরানন্দ ঠাকুর পানির ভিতরে।
কুম্ভীর ধরিয়া আনে সভার গোচরে \
দেবকীনন্দন দাস রচিত বৈষ্ণব বন্দনায় বলা হয়েছে –
সুন্দরানন্দ ঠাকুর বন্দিব বড় আশে।
ফুটাল কদম্ব ফুল জম্বীরের গাছে \
সুন্দরানন্দ ঠাকুর চিরকুমার ছিলেন। তিনি নিত্যানন্দ প্রভুর সাথেই সবসময় থাকতেন। তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতাদের শিষ্য সেবাইতগণের বংশধরেরা বিভিন্ন জায়গায় আছেন। বীরভূম জেলায় মঙ্গলডিহি গ্রামে জ্ঞাতিবংশ রয়েছে। সেখানে তিনি পানুয়া গোপালকে দীক্ষা প্রদান করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ ও রাধারমণ বিগ্রহ বহরমপুর সৈদাবাদের গোস্বামীরা নিয়ে যান। মাঘী পূর্ণিমায় তাঁর তিরোভাব উৎসব পালিত হয়।
তাঁর শ্রীপাট বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানায় অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন বলতে শুধু তাঁর জন্মভিটা রয়েছে। মন্দিরের ধ্বংসাবশেষস্বরূপ একটি উচুঁ ভিটা দেখা যায়। গৌড়ীয় আচার্যভাস্কর শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর সপার্ষদ গৌড়মণ্ডল পরিক্রমা কালে ১৯২৫ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীপাটে শুভ বিজয় করেন এবং ঠাকুর সুন্দরানন্দ প্রসঙ্গে ‘আত্মধর্ম ও মনোধর্মের পার্থক্য’ বিষয়ক সুদীর্ঘ বক্তৃতা দান করেন। মহেশপুর শহরে সুন্দরানন্দ ঠাকুরের শ্রীপাট নামে একটি নব্য প্রতিষ্ঠিত মন্দির রয়েছে।
পথনির্দেশ
ঢাকা-খুলনা রুটে কোটচাঁদপুর নেমে সেখান থেকে বাসযোগে মহেশপুর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দর্শনাগামী বাসে মহেশপুর নামতে হবে। অথবা যেকোনো বাসে কালীগঞ্জ কিংবা কোটচাঁদপুর নেমে সেখান থেকে আবারো বাসযোগে ১০-১৫ কি.মি. দূরে মহেশপুর যাওয়া যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>