শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরের শ্রীগুরুদেব শ্রীল লোকনাথ দাস গোস্বামীর আবির্ভাব-স্থান এটি। তিনি পূর্ব লীলায় লবঙ্গ/লীলা মঞ্জরী ছিলেন। ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীপদ্মনাভ চক্রবর্তী ও সীতাদেবীর কোলে আলো করে তিনি আবির্ভূত হন। তিনি শ্রীমন্মহাপ্রভুর দু-বছরের বড় ছিলেন। শ্রীপদ্মনাভ চক্রবর্তী ভরদ্বাজ-গোত্রীয় কুলীন রাঢ়ী ব্রাহ্মণ। তাঁর চার পুত্র ভবনাথ, পূর্ণানন্দ বা প্রগলভ, লোকনাথ এবং রঘুনাথ।
ছোটবেলা থেকেই লোকনাথ অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন ছিলেন। পিতার নিকট ব্যাকরণাদি শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। কেউ কেউ বলেন যে, মহাপ্রভু বিদ্যাবিলাসকালে পূর্ববঙ্গ ভ্রমণের সময় তালখড়িতে এসেছিলেন। লোকমুখে মহাপ্রভুর কথা শ্রবণে লোকনাথের বৈরাগ্যের উদয় হয়। পিতা-মাতা অপ্রকট হওয়ার পর তিনি নবদ্বীপে গিয়ে মহাপ্রভুর সাথে হরিনাম সংকীর্তনে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণের প্রাক্কালে লোকনাথ গোস্বামীকে বৃন্দাবনে গিয়ে ভজন ও লুপ্ততীর্থ উদ্ধারের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। ভবিষ্যতে বৈষ্ণবগণ বৃন্দাবনে গেলে তাদেরকেও বৃন্দাবন দর্শন করানোর দায়িত্বভার অর্পণ করেন। শ্রীল গদাধর গোস্বামীর শিষ্য শ্রীল ভূগর্ভ গোস্বামীকে সাথে নিয়ে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত চিত্তে বৃন্দাবন গমন করেন। তাঁরা দুজনই সর্বপ্রথম বৃন্দাবনে গমন করেন।
তিনি সর্বদাই মহাপ্রভুর বিরহ অনুভব করতেন। মহাপ্রভু দক্ষিণ ভারতে যাত্রা করেছেন শুনে লোকনাথ গোস্বামী তাঁকে দর্শন করার জন্য পদব্রজে দক্ষিণ ভারতে গমন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারে যে, মহাপ্রভু বৃন্দাবনে গমন করেছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে গমন করেন, কিন্তু বৃন্দাবনে ফিরে এসে শুনতে পান যে, মহাপ্রভু প্রয়াগে গিয়েছেন। তখন ভগ্ন মনোরথ নিয়ে প্রয়াগের উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রার উদ্যোগ করলে মহাপ্রভু তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন, “লোকনাথ! আমি সর্বদাই তোমার নিকট আছি। তুমি বৃন্দাবন ছেড়ে কোথাও যেও না। বৃন্দাবনেই তোমার সর্বসিদ্ধি হবে।” মহাপ্রভুর আদেশে তিনি শ্রীকৃষ্ণের নানা লীলাস্থলী দর্শন করে বিপ্রলম্ভভাবে শ্রীকৃষ্ণ ভজনে মগ্ন হন। শ্রীরূপ গোস্বামী, শ্রীসনাতন গোস্বামী, শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী পরবর্তীকালে বৃন্দাবনে গেলে তিনি পরমানন্দে নিমগ্ন হন।
শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীকে শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে তাঁর কথা উল্লেখ না করার নির্দেশ দেন। তিনি খদিরবনে ভজন করতেন। শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর তাঁর একমাত্র শিষ্য ছিলেন। ছত্রবনের পাশে উমরাও নামক কিশোরী কিছুদিন অবস্থানকালে তাঁর বিগ্রহ সেবার আগ্রহ হয়। এ সময় শ্রীশ্রীরাধাবিনোদ স্বয়ং ভক্তের ভাব বুঝতে পেরে সামনে বিগ্রহরূপে প্রকট হন। তিনি একটি ঝোলা তৈরি করে তাতে শ্রীবিগ্রহগণকে রেখে সেই ঝোলাটি সর্বদা গলায় ঝুলিয়ে রাখতেন। এ বিগ্রহ এখনো বৃন্দাবনে সেবিত হচ্ছেন। তিনি সর্বদাই বৃক্ষতলে অবস্থান করে ভজনে নিমগ্ন থাকতেন অনেক বয়স পর্যন্ত খদিরবনে ভজন করে নিত্যলীলায় প্রবিষ্ট হন।
তালখড়িতে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর আবির্ভাব স্থান বা জন্মভিটাটি এখনো দেখা যায়। সেখানে একটি বেদি রয়েছে। এ স্থানটি বাবুদের বাড়ি নামে পরিচিত। রাস্তার অপর পাশে অল্প একটু দূরে তালখড়ি আশ্রম নামে পরিচিত একটি রাধাগোবিন্দ মন্দির। সেখানে থাকা ও প্রসাদ গ্রহণের সুব্যবস্থা রয়েছে।
পথনির্দেশ
বাসযোগে ঢাকা-যশোর রুটে মাগুরা জেলার আড়পাড়া বাস স্টপেজে নেমে সেখান থেকে টেম্পোযোগে তালখড়ি বাজারে নামতে হবে।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>