সিলেট জেলার অন্তর্গত পঞ্চখণ্ডই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গের আদি নিকেতন। এ অঞ্চলে বহু পূর্বের ত্রিপুরার রাজা এক মহাযজ্ঞ করেন। সেই যজ্ঞে পৌরোহিত্য করার জন্য মিথিলা থেকে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ এনে তিনি উক্ত যজ্ঞ সম্পন্ন করেন। রাজা যজ্ঞের দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে মিথিলা থেকে আসা উক্ত ব্রাহ্মণদের দক্ষিণাস্বরূপ পাঁচ খণ্ড ভূমি দান করেন বিধায় এ অঞ্চলের নাম পঞ্চখণ্ড হয়।
পঞ্চখণ্ডনিবাসী শ্রীজলধর পণ্ডিতের দ্বিতীয় পুত্ররূপে শ্রীবাস পণ্ডিত আবির্ভূত হন। শ্রীচৈতন্যভাগবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত পাঠে জানা যায়, শ্রীবাস পণ্ডিতেরা চার ভাই (শ্রীবাস, শ্রীরাম, শ্রীপতি ও শ্রীকান্ত অথবা শ্রীনিধি)। কিন্তু জলধর পণ্ডিতের শ্রীনলিন পণ্ডিত নামে এক পুত্র ছিলেন। শ্রীবাস পণ্ডিত বিয়ানীবাজারেই অপ্রকট হন।
শ্রীবাস প্রভুর বয়স যখন দ্বাদশ বৎসর তখন জলধর পণ্ডিত সপরিবারে নবদ্বীপ গমন করেন। নবদ্বীপে তাঁরা চার ভাই-ই শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর একান্ত সেবক ও প্রিয়ভাজন ছিলেন।
শ্রীবাস অষ্টকের শেষে বলা হয়েছে যে-
আশ্রয়ামি শ্রীশ্রীবাসং তমাদ্যং পণ্ডিতং মুদা।
শ্রীচৈতন্যপ্রিয়তমং বন্দে শ্রীবাস পণ্ডিতং।
যৎকারুণ্য কটাক্ষেণ শ্রীগৌরাঙ্গে রতিভবেৎ \
অর্থাৎ যিনি হচ্ছেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অত্যন্ত প্রিয় এবং যার একটুখানি কৃপাকটাক্ষ প্রাপ্ত হলেই শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রতি ভক্তি জন্মায়। সেই শ্রীবাস ঠাকুরকে আমি বারবার সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি।
শ্রীবাস প্রভুর বংশধরগণ নিজ সম্পত্তিতে দধিবামন, শ্রীশ্রীলক্ষী নারায়ণ ও শিবের ভিন্ন ভিন্ন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের সকল সম্পত্তি বিগ্রহের নামে উৎসর্গ করে বংশানুক্রমে বিগ্রহের সেবাপূজা করেন। বর্তমানেও সেই স্থাপিত আদি শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণের মন্দির রয়েছে। কালক্রমে দেশভাগ হলে কয়েকজন পণ্ডিত ভারতে স্থানান্তরিত হন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার প্রাক্কালে এ মন্দির দুর্বৃত্ত কর্তৃক আক্রান্ত হয়। এতে মন্দির ও মন্দির সংক্রান্ত আসবাবপত্র বিনষ্ট হয়। পণ্ডিত বংশধরেরা দেশত্যাগ করেন, কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) ১৯৮০ সাল হতে শ্রীবাস অঙ্গনটি (মন্দিরের) পরিচর্যা ও দেখাশুনা করে আসছেন। গত ২০০৮ সালে ইস্কনের অন্যতম গুরুদেব ও জিবিসি শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ বিশ্বের ১২০টি দেশের ভক্তবৃন্দ নিয়ে এ স্থান দর্শনে আসেন।
পঞ্চখণ্ড থেকে এক কিলোমিটার দূরে বাসুদেব বাড়ি নামে খ্যাত একটি প্রাচীন মন্দির বর্তমান। মন্দিরের শ্রীবাসুদেব বিগ্রহ সপ্তম শতাব্দীতে প্রকটিত হয়েছিল। সেই প্রাচীন বিগ্রহ এখনো অক্ষত রয়েছে।
পথনির্দেশ
ঢাকা থেকে সিলেট বিভাগীয় বিয়ানীবাজারগামী সরাসরি বাস পাওয়া যায়। তবে সিলেট থেকেও বাসে করে সরাসরি বিয়ানীবাজার যাওয়া যায়। বাসস্ট্যান্ডের অনতিদূরেই পঞ্চখণ্ডের শ্রীবাস অঙ্গন মন্দির।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>