গোপীনাথপুর-নন্দিনী মাতা

গোপীনাথপুর (নন্দিনী মাতা)

গোপীনাথপুর-নন্দিনী মাতা
নন্দিনী মাতা, গোপীনাথপুর, জয়পুরহাট

গোপীনাথপুর জয়পুরহাট জেলার অন্তর্গত আক্কেলপুর থানায় অবস্থিত। এই স্থানে শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের পত্নী শ্রীসীতা ঠাকুরানীর শিষ্যা নন্দিনীর শ্রীপাট। নন্দিনী সম্পর্কে গৌরগণোদ্দেশদীপিকায় উল্লেখ আছে- নন্দিনী জঙ্গলী জ্ঞেয়া জয়া চ বিজয়া ক্রমাৎ। পূর্বে কৃষ্ণলীলায় যাঁরা জয়া বিজয়া ছিলেন, তাঁরাই জন্মগ্রহণ করে সীতাদেবীর দুই সহচরী ‘নন্দিনী’ ও ‘জঙ্গলী’ রূপে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। নন্দিনী মাতা সীতাদেবীর বিশেষ সেবিকা ছিলেন। সীতা ঠাকুরানী যখন শান্তিপুরে অবস্থান করতেন সে সময় দীর্ঘদিন ধরে নন্দিনী সীতা দেবীর সেবা করেছিলেন।

সীতা দেবীর দুই দাসী জঙ্গলী নন্দিনী।
কৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা সীতা দিলেন আপনি \
নন্দিনী সেবায়ে শ্রী সীতার চরণে।
জঙ্গলী অপস্যা করিতে গেল এক বনে \

পরবর্তীকালে শ্রীসীতা ঠাকুরাণী নন্দিনীকে আদেশ করেন, “তুমি বনে আশ্রয় নিয়ে শ্রীগৌরাঙ্গদেবের ভজনা করো এবং সেখানে হঠাৎ এক কুমারীর গর্ভে এক মহাপুরুষ জন্ম গ্রহণ করবে। সেই মহাপুরুষ থেকেই তোমার গণের বিস্তার হবে।” নন্দিনী সীতা ঠাকুরানীর আদেশ অনুসারে উত্তরবঙ্গের গোপীনাথপুরে আসেন। এক গৃহস্থ তাকে থাকার জন্য একটি ঘর প্রদান করেন। এই স্থানে নন্দিনী তপস্বিনীর বেশে ভজন সাধন করে বহু অলৌকিক লীলা প্রকাশ করেছিলেন। পুরীধামে নন্দিনী মাতার একটি মঠ রয়েছে।

১৫২০ হতে ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ নন্দিনী প্রিয়ার পূজাপার্বণে এবং অতিথি সেবার কথা শুনে খুশি হন এবং তাম্রফলকে লিখে পূর্ণ গোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে প্রদান করেন। পালযুগের নির্মাণশৈলী ব্যবহার করে এ মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত হয়। ১৩০৪ বাংলা সালে এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২৮ হতে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এখনও পুরাতন কারুকার্যের কিছু নমুনা মুল ভবনে রয়েছে। মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট।

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি এবং মধ্যাহ্নে আধামণ (২০ কেজি) চালের অন্নভোগ দেওয়া হয়। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমাতে এখানে মেলা বসে এবং ১৩ দিন ধরে এ মেলা চলে। পূর্বে এক মাস ধরে মেলা হতো। ছায়াঘন সবুজে ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এলাকাটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। দুর দুরান্ত থেকে ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু বহু ব্যক্তি এখানে প্রতিনিয়তই আসতেন।

যাত্রানির্দেশ

বগুড়া শহরের চৌমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে আক্কেলপুরগামী বাসে গোপীনাথপুর নামা যায়। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে মূল গোপীনাথ মন্দির। এছাড়া রেলপথে সৈয়দপুর লাইনে আক্কেলপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটোরিক্সায় গোপীনাথপুর বাজারে আসা যায়। বাজারের পাশেই মন্দিরটি অবস্থিত।

আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>

Share on

Facebook
Twitter
LinkedIn