শ্রীল রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামীর পিতা শ্রীল তপন মিশ্র বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরের পদ্মা তীরস্থ রামপুর গ্রামে আবির্ভূত হন। তপন মিশ্র বহু চেষ্টা করেও সাধ্যসাধন নির্ণয়ে সক্ষম হননি। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিদ্যাবিলাস লীলায় পূর্ববঙ্গ ভ্রমণকালে রামপুরে আসেন। সে সময় এক জ্যোতির্ময় দেবকল্প পুরুষ স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে তপন মিশ্রকে বলেন যে, নিমাই পণ্ডিত স্বয়ং ভগবান। তাই তাঁর নিকট শরণাগত হও। তাঁর কাছ থেকেই তুমি সাধ্যসাধন নির্ণয় করতে পারবে। এ বলে সেই দেব অন্তর্হিত হলে তপন মিশ্রের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তিনি রোদন করতে করতে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে নিমাই পণ্ডিতের অনুসন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে তিনি শিষ্যমণ্ডলী পরিবেষ্টিত পরম ঐশ্বর্যমণ্ডিত নিমাই পণ্ডিতের দর্শন পান। সশ্রদ্ধ প্রণতি জানিয়ে তিনি করজোড়ে নিমাই পণ্ডিতকে নিবেদন করেন-
বিপ্র বোলে আমি অতি দীনহীন জন।
কৃপা দৃষ্ট্যে কর মোরে সংসার মোচন \
সাধ্যÑসাধন তত্ত¡ কিছুই না জানি।
কৃপা করি আমা প্রতি কহিবা আপনি \
পরমদয়াল শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মধুর হাসি হেসে তাঁকে বলেন- কায়মনোবাক্যে শ্রীকৃষ্ণ ভজনের জন্য এমন ইচ্ছাই তোমার পরম সৌভাগ্য। শ্রীকৃষ্ণভজন অতি দুর্গম। সত্য যুগে বিষ্ণুর ধ্যান, ত্রেতা যুগে যজ্ঞানুষ্ঠান ও দ্বাপরে শ্র্রীবিষ্ণুর পরিচর্যার দ্বারা যে ফল পাওয়া যায়, কলিযুগে কেবল শ্রীহরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে সে সমস্ত ফল আপনা থেকেই পাওয়া যায়।
চারিযুগে চারি ধর্ম জীবের কারণ।
কলিযুগের ধর্ম হয় নাম সংকীর্তন \
শুন মিশ্র কলিকালে নাহি তপ যজ্ঞ।
যেই জন ভজে কৃষ্ণ তাঁর মহাভাগ্য \
অতএব গৃহে তুমি কৃষ্ণ ভজ গিয়া।
কুটিনাটি পরিহরি একান্ত হইয়া \
সাধ্য সাধন তত্ত¡ যা কিছু সকল।
হরিনাম সংকীর্তনে মিলিবে সকল \
(চৈ.ভা. আ. ১৪ অধ্যায়)
এভাবে মহাপ্রভু তাঁকে সাধ্যসাধন তত্ত¡ নির্ণয়ের উপায় বললে তিনি মহাপ্রভুকে ভগবৎজ্ঞানে প্রণতি নিবেদন করে তাঁর সাথে নবদ্বীপে যেতে চান। মহাপ্রভু তখন তাঁকে বারাণসীতে যেতে বলেন এবং দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় তাঁর সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবেন বলে প্রবোধ দেন। পরবর্তীকালে এই তপন মিশ্রের গৃহেই মহাপ্রভু ভিক্ষা করেন এবং তাঁর আমন্ত্রণেই তিনি বারাণসীর মায়াবাদী সন্ন্যাসীদের উদ্ধার করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, রামপুর গ্রাম ও তপন মিশ্রের বসতভিটার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>