মগডোবা (শ্রী জগন্নাথ চক্রবর্তী)

শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ চক্রবর্তীকে মামা বলে সম্বোধন করতেন, তাই সকলে এ বৈষ্ণবকে মামা বা মামুঠাকুর বলে ডাকতেন। তিনি মহাপ্রভুর মাতামহ শ্রীনীলাম্বর চক্রবর্তীর ভ্রাতুষ্পুত্র। ফরিদপুর জেলায় মগডোবা গ্রামে তিনি বাস করতেন। ইনি শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর অপ্রকটের পর শ্রীনীলাচল ধামে শ্রীশ্রী টোটাগোপীনাথের সেবা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকে সেখানেই বাস করতে শুরু করেন। বৃন্দাবন লীলায় ইনি ‘কলভাষিণী’ নামে গোপী ছিলেন। যদুনন্দন দাসকৃত শাখা নির্ণয় নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে-

যঃ প্রেম্না গৌরচন্দ্রেন পরিবারগণৈঃ সহ।
উৎকলে ভাষিতো মামুস্তং বন্দে মামু ঠাকুরম্ \

শ্রীনরোত্তম বিলাসে বলা হয়েছে যে, শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুর যখন শ্রীজগন্নাথপুরী দর্শনে গমন করেন, তখন মামু ঠাকুর মহাপ্রভুর বিচ্ছেদ ব্যথায় অত্যন্ত কাতর হয়ে কোনো রকমে প্রাণধারণ করেছিলেন।

সহিতে নারয়ে দুঃখ শ্রীমামু গোসাঞি।
মৃত প্রায় পড়িয়া আছেন এক ঠাঁই \

পরে মামু গোসাই নীলাচল ক্ষেত্রে শ্রীমন্মহাপ্রভু এবং তাঁর ভক্তগণের লীলাস্থানসমূহ শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুরকে দর্শন করান। শ্রীভক্তিরত্নাকর গ্রন্থের অষ্টম তরঙ্গে বলা হয়েছে-

শ্রীমামুগোস্বামী নরোত্তমে নিরখিয়া।
আলিঙ্গন কৈল অতি অধৈর্য হইয়া \
নেত্রজলে সিঞ্চিয়া কহয়ে বার বার।
প্রভুর ইচ্ছায় দেখা হইল তোমার \
বৈষ্ণবের গতায়তে সকল শুনিলু।
সাধছিল তোমারে দেখিতে দেখা পাইনু \

গোপীনাথ মন্দিরের গোপীনাথের প্রকোষ্ঠের পাশে যে গৌর-গদাধর শ্রীবিগ্রহ রয়েছে, সেই গৌর-গদাধর শ্রীবিগ্রহ মামু ঠাকুর বা শ্রীজগন্নাথ আচার্যের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি বৃদ্ধকাল অবধি টোটা গোপীনাথের সেবা করেছিলেন। বৃদ্ধকালে তিনি যখন সেবা করতে অশক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে গোপীনাথের গলায় মালা পরাতে পারতেন না, তখন গোপীনাথ পদ্মাসনে বসে যান এবং মামুঠাকুর তখন থেকে অনায়াসে গোপীনাথের অঙ্গরাগ, মালা পরাতে, সেবা করতে পারতেন।

মগডোবায় পূর্বে বাসুদেব বিগ্রহ সেবিত হতো। পরবর্তীকালে ২০ কিলোমিটার দূরে ফুটিবাড়িতে সেই শ্রীবিগ্রহ পূজিত হতেন। তাঁর পরবর্তীকালে এ বিগ্রহ খাটরা প্রাণপুরে রক্ষিত ছিল। সেই বিগ্রহ চুরি হয়ে যাওয়ার পর মৃত্তিকা নির্মিত বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বর্তমানে এ মগডোবায় শ্রীজগন্নাথ আচার্যের কোনো স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া যায় না। ফরিদপুর থেকে পুকুরিয়া, সেখান থেকে আটরশি হয়ে প্রাণপুর বাসুদেব বাড়ি যেতে হয়।

পথনির্দেশ

ফরিদপুর থেকে টেকেরহাট বা মাদারীপুরগামী যে কোনো বাসে ভাঙ্গা নেমে, তদুপরি ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী বাসে তাড়াইল নেমে সেখান থেকে টেম্পোতে করে ছোট চান্দ্রা নেমে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে সেই গ্রামে যাওয়া যায়। মগডোবা গ্রামের বর্তমান নাম চান্দ্রা।

আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>

Share on

Facebook
Twitter
LinkedIn