শ্রীসদাশিব কবিরাজের পুত্র পুরুষোত্তম দাস। পুরুষোত্তম দাস কৃষ্ণলীলায় স্তোককৃষ্ণ নামক সখা ছিলেন। তাঁর পুত্র শ্রীকানু ঠাকুর নদীয়া জেলার সুখসাগরে আবির্ভূত হন ইংরেজি ১৫৩৫ সালে আষাঢ়ী শুক্লা-দ্বিতীয়ার বৃহস্পতিবারে রথযাত্রার দিনে। কানু ঠাকুর ব্রজলীলায় উজ্জ্বল সখা ছিলেন।
তাঁর পুত্র মহাশয় শ্রীকানু ঠাকুর।
যাঁর দেহে রহে কৃষ্ণ-প্রেমামৃত পুর \
(শ্রী চৈ. চ. ১১/৪০)
পুরুষোত্তম ঠাকুরের স্ত্রীর নাম জাহ্নবা। তিনি পুত্রসন্তান জন্মদানের কিছুদিনের মধ্যেই অপ্রকট হন। ছোট্ট শিশু শ্রীকানু ঠাকুর কে নিয়ে পুরুষোত্তম চিন্তায় পড়েন। নিত্যানন্দ প্রভু পুরুষোত্তম ঠাকুরের পত্নীর অপ্রকট বার্তা শ্রবণ করে সুখসাগর গ্রামে আসেন এবং শিশুকে নিয়ে খড়দহে তদীয় পত্নী জাহ্নবা মাতার কাছে নিয়ে যান। তিনিই শিশুটিকে লালন-পালন করেন। শৈশবেই তাঁর ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি দেখে নিত্যানন্দ প্রভু তাঁর নাম রাখেন ‘শিশুকৃষ্ণ দাস’।
পাঁচ বছর বয়সে জাহ্নবা মাতার সাথেই তিনি শ্রীবৃন্দাবন ধামে গমন করেন। শ্রীজীব গোস্বামী প্রমুখ ব্রজবাসী শিশুকৃষ্ণ দাসের ভাবাদি দর্শন করে তাঁকে ‘ঠাকুর কানাই’ নাম প্রদান করেন। একবার বৃন্দাবনে শ্রীমদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গণে তিনি যখন কীর্তনানন্দে বিহ্বল ছিলেন, তখন তাঁর ডান পায়ের নূপুর চ্যুত হয়ে বাংলাদেশের যশোর জেলার বোধখানায় পতিত হয়। এরপর থেকে তিনি বোধখানায় বসবাস শুরু করেন।
শেষজীবনে তিনি বোধখানা থেকে মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায় চলে আসেন। সেখানে একদিন শিলাবতী নদীতে øানের সময় তাঁর পদতলে একটি ব্রাহ্মণকুমারের শবদেহ স্পর্শ হলে তিনি তাঁকে ওপরে তুলে মন্ত্রদান করতেই সে জীবিত হয়ে আত্মপরিচয় প্রদান করে। তাঁর নাম শ্রীরাম। এ গ্রামে ঠাকুর একদা চিড়াদধি উৎসব আয়োজন করেন। ব্রাহ্মণগণ অকালে আম ও কাঠাল খেতে ইচ্ছে পোষণ করলে তিনি শ্রীরামকে নিয়ে শিলাবতী নদীর অপর তীরে এক আম্রকাননে গমন করেন। সেখানে আম ও কাঠালের ভারে অবনত বৃক্ষসমূহ থেকে প্রচুর ফল নিয়ে এসে ব্রাহ্মণদের তৃপ্তি সহকারে ভোজন করান।
মহোৎসবের কিছুদিন পর তিনি সমাধিতে উপবিষ্ট হন। পরদিনও তাঁর দেহে প্রাণের স্পন্দন ছিল না। সেই দিন নিকটস্থ ধাক্দিয়া গ্রামে বটবৃক্ষতলে জনৈক গোপ তাঁকে এক বটবৃক্ষতলে উপবিষ্ট দেখেন এবং তিনি তাঁর নিকট হতে দধি নিয়ে ভোজন করে বলেন “তুমি আমার আশ্রমে গিয়ে শিষ্যদের নিকট হতে মূল্য নিবে এবং তাদের বলবে যে, আমি সমাধি লাভ করে বৃন্দাবনে চলছি। আমাকে যেন এ স্থানে সমাধি করা হয়।” পরবর্তীকালে শিষ্যগণ সেখানে সমাধি মন্দির নির্মাণ করেন। কানু ঠাকুর খেতুরী উৎসবেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
বোধখানায় অতিপ্রাচীন ‘প্রাণবল্লভ’ বিগ্রহের সেবা ছিল। কিন্তু বর্গীর হাঙ্গামার সময় তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের সন্তানগণ ব্যতীত সকলেই নদীয়ার ভাজনঘাটে চলে যান। বর্তমানে যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানায় সেই বোধখানা গ্রামটি দৃষ্ট হয়। সেখানে প্রাচীন মন্দির ও গোস্বামীদের বসতবাড়ির চিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু সেখানে এখন গোস্বামী বংশীয় আর কেউ থাকে না। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ১৯২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীপাট পরিদর্শনে আসেন। তথায় কানু ঠাকুরবংশীয় শ্রীযুক্ত সতীশ চন্দ্র মহাশয় এক সুদীর্ঘ অভিনন্দনপত্র দ্বারা ঠাকুরের অভ্যর্থনা করেন।
পথনির্দেশ
ঢাকা থেকে বেনাপোল কিংবা নাভারণগামী যেকোনো বাসে ঝিকরগাছা স্টপেজে নামতে হবে। সেখান থেকে ঝিকরগাছা থানার পার্শ্ববর্তী সরু রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার গেলেই বোধখানা বাজারের দেখা মিলবে।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>