শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ পার্ষদ শ্রী গদাধর পণ্ডিতের পিতা শ্রীমাধব মিশ্র বেলেটি গ্রামে আবির্ভুত হন। আনুমানিক ১৪৮৭ সালে বৈশাখী অমাবস্যা তিথীতে শ্রীমাধব মিশ্র ও রত্নাবতী দেবীর কোল আলো করে শ্রীগদাধর পণ্ডিত আবির্ভুত হন। তবে শ্রী গদাধর পণ্ডিতের আবির্ভাব স্থান নিয়ে কিছু মতান্তর রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন বেলেটি গ্রামেই তাঁর আবির্ভাব। প্রেমবিলাসের দ্বাবিংশ বিলাসের বর্ণনাতে সে বিষয়টি স্পষ্ট করে লেখা নেই। সেখানে বলা আছে,
বৈশাখের কুহু দিনে অতি শুভক্ষণে।
প্রসবিলা রত্নাবতী পুত্র রতনে \
কিন্তু পরবর্তীতে সেই গ্রন্থেরই চতুর্বিংশতি বিলাসে বর্ণিত আছে যে,
মাধবের আর এক পুত্র নদিয়া মাঝারে।
বৈশাখের কুহু দিনে জন্মলাভ করে \
রাখিলা তাঁহার নাম শ্রীল গদাধর।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেবের পার্ষদ প্রবর \
তবে শ্রী গদাধরের ভ্রাতা দ্বিজ বাণীনাথের আবির্ভাব বেলেটি গ্রামেই। শ্রীমাধব মিশ্র পুন্ডরীক বিদ্যানিধি মহাশয়ের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। গদাধর দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত বেলেটি গ্রামেই অবস্থান করেন। নবদ্বীপে তাঁর মাতুলালয় ছিল। ১৩ বছর বয়স থেকে তিনি সেখানে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন।
মহাপ্রভুর গৃহের অতি নিকটেই তাঁর গৃহ ছিল। বাল্যকাল হতেই শ্রীগদাধর পন্ডিত শ্রীকৃষ্ণে গাঢ় অনুরাগী, ধীর, শান্ত, নির্জনপ্রিয় ও জাগতিক বিষয়ে পরম বিরক্ত ছিলেন। শ্রীগৌরসুন্দর কখনো গদাধরকে নিয়ে স্বীয় অঙ্গনে বিবিধ নর্মক্রীড়াদি করতেন। গ্রাম্য টোলে তাঁরা একসাথে পড়াশোনা করতেন। শ্রীগৌরহরি গদাধরকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতেন না। অল্পকালেই গদাধর বিবিধ শাস্ত্রীয় বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি আকুমার ব্রহ্মচারী ছিলেন।
একবার তিনি মুকুন্দের সাথে শ্রীপুণ্ডরীক বিদ্যানিধির দর্শন করতে যান। প্রথমে তাঁর চরিত্র বুঝতে না পেরে অপরাধ করে বসেন। তাই অপরাধ স্খালনের জন্য তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন।
শ্রীমন্মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করে পুরীধামে গেলে তিনিও ক্ষেত্র সন্ন্যাস ব্রত নিয়ে সেখানে এক তোটায় অবস্থান করেন। সেখানে গোপীনাথ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। আর তাঁর ভ্রাতা দ্বিজ বাণীনাথ নবদ্বীপের চম্পাহাটীতে অবস্থান করে গৌরগদাধর বিগ্রহ প্রকট করেন। কিন্তু তাঁর পুত্ররত্ন শ্রীনয়নানন্দ পুরীতে গদাধর পণ্ডিতের কাছে চলে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করলে গদাধর পণ্ডিত তাঁকে দীক্ষা প্রদান করে তাঁর সাথে রাখেন। পুরীতে শ্রীগদাধর পণ্ডিত মহাপ্রভুকে প্রতিনিয়ত ভাগবত শ্রবণ করাতেন। মহাপ্রভুর অপ্রকটের ১১ মাস পর আনুমানিক ১৫৩৫ সালে পুরীধামে জ্যৈষ্ঠী অমাবস্যায় তিনি অপ্রকট হন। তাঁর অপ্রকটের পূর্বে তিনি নয়নানন্দকে স্বহস্তে লেখা গীতা গ্রন্থ ও মেয়োকৃষ্ণ বিগ্রহ (যা তিনি গলদেশে ধারন করে রাখতেন) প্রদান করে রাঢ়দেশের ভরতপুরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পথনির্দেশ
কালের বিবর্তনে বেলেটি এখন বাণীগ্রাম রূপ ধারন করেছে। চট্টগ্রাম জেলার বহদ্দারহাট আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালি গামী বাসে বাণীগ্রাম নামা যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>