বৈদিক বর্ষপঞ্জি অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার সাফল্যের জন্য উপযুক্ত একটি দিন। অক্ষয় তৃতীয়ার অসীম সুবিধাগুলি সম্পর্কে যারা সচেতন তারা ঐতিহ্যবাহীভাবে এই শুভ দিনে বিবাহ, দীক্ষা, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, গৃহনির্মাণ, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি বৃহৎ অনুষ্ঠানের সূচি রাখেন।
অক্ষয় তৃতীয়া হচ্ছে চন্দনযাত্রার প্রথম দিন। এদিন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে ভগবানকে চন্দনের প্রলেপ দেওয়া হয়। ২১ দিন ব্যাপী চন্দনযাত্রা উৎসবে ভক্তগণ ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে সতেজ চন্দনের প্রলেপ প্রদান করে শীতলতা প্রদান করার ব্যবস্থা করেন।
শ্রীকৃষ্ণকে তাদের জীবন ও প্রাণ এবং সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, ভক্তগণ গ্রীষ্মের সূর্যের জ্বলন্ত উত্তাপে ভগবানের কষ্ট পাওয়া সহ্য করতে পারে না। যদিও ভগবান স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই, তবুও তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তারা ভালোবাসা এবং স্নেহের সাথে উপযুক্ত সেবা প্রদান করেন।
চন্দনযাত্রা বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে শুরু হয়ে একটানা বিশ দিন ধরে চলতে থাকে। ভগবান জগন্নাথ রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন মহরাজাকে বিশেষত এই সময়ে উৎসবটি পালন করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। প্রলেপ দিয়ে ভগবানের দেহকে সুগন্ধযুক্ত করা একটি ভক্তিমূলক সেবা এবং সমস্ত প্রলেপের মধ্যে সেরা হলো চন্দনের প্রলেপ। বৈশাখ মাস যেহেতু বাংলাদেশ এবং ভারতে প্রচণ্ড উত্তপ্ত, তাই প্রভুর দেহে চন্দন কাঠের শীতল প্রভাব অত্যন্ত আনন্দদায়ক। কেবল বিগ্রহের চোখ দুটি দৃশ্যমান রেখে সমস্ত দেহে চন্দনের প্রলেপ দেওয়া হয়।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের জন্য, চন্দনযাত্রা সম্পর্কিত সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য লীলা হলো শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীর। শ্রী গোবর্ধন পর্বতে একটি ব্যাপক উৎসবের মাধ্যমে গোপাল বিগ্রহকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, এক রাতে শ্রী গোপাল শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীর স্বপ্নে আবির্ভূত হন। স্বপ্নে ভগবান শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীকে মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন এনে তাঁর দিব্য অঙ্গে প্রয়োগ করে তাঁকে তীব্র উত্তাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বলেন।
শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত: মধ্য লীলা (৪/১০৬) উল্লেখ রয়েছে,
গোপল কহে, পুরী আমার তাপ নাহি যায়।
মলয়জ চন্দন লেপ, তবে সে জুড়ায় ।।
ভগবানের শুদ্ধভক্ত মাধবেন্দ্রপুরী ,তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য, সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথপুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। পথে তিনি রেমুনার শ্রী গোপীনাথ দর্শন প্রাপ্ত হন। গোপীনাথ তাঁর জন্য ক্ষীর চুরির লীলা করেছিলেন, এজন্য পরবর্তীতে এই বিগ্রহ ক্ষীরচোরা গোপীনাথ নামে খ্যাতি লাভ করে। শ্রীল মাধবেন্দ্র পুরী জগন্নাথ পুরীতে গিয়ে সেখানে রাজার সহায়তায় গোপালের জন্য প্রচুর পরিমাণে চন্দন আহরণ করেছিলেন। গোবর্ধন পর্বতে ফেরার পথে গোপীনাথের মন্দিরটি অতিক্রম করার সময় আবারও তিনি একটি স্বপ্নে গোপাল আদিষ্ট হন, চন্দন গোবর্ধন পর্যন্ত না নিয়ে গোপীনাথের অঙ্গেই যেন প্রলিপ্ত করা হয়, কেননা গোপাল এবং গোপীনাথের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই । এরপরে মাধবেন্দ্র পুরী চন্দন নামিয়ে গোপীনাথের অঙ্গে প্রলেপ প্রদান করেন, যা গোপাল এবং গোপীনাথ উভয়কেই প্রচুর আনন্দ দিয়েছিল। এভাবেই চন্দন-যাত্রা উৎসবটি ভক্তদের কাছে প্রকাশিত হয়।