হরিদাস ঠাকুর বূঢ়ণের নিজ গৃহ ত্যাগ করে বেনাপোলের জঙ্গলে কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখানে একটি পর্ণকুটির তৈরি করে প্রত্যহ তুলসীসেবা ও তিন লক্ষ হরিনাম করতেন। তাঁর ঐকান্তিক ভজননিষ্ঠা দেখে সকলেই তাঁকে সম্মান করতে শুরু করেন। কিন্তু সে অঞ্চলের পাষণ্ড জমিদার রামচন্দ্র খান এতে ঈর্ষান্বিত হন। হরিদাস ঠাকুরকে অপদস্থ করার জন্য বিবিধ উপায় উদ্ভাবন করতে থাকেন। কোনোভাবে কিছু না করতে পেরে অবশেষে হীরা বাই নামে এক বেশ্যাকে নিযুক্ত করেন। সেই বেশ্যা পরপর তিন দিন নিজের রূপ-যৌবন প্রদর্শন করত হরিদাস ঠাকুরের সঙ্গ কামনা করেন।
কিন্তু হরিদাস ঠাকুর তাঁকে অপেক্ষা করতে বলার ছলে হরিনাম শ্রবণ করান। আর তাতে সেই বেশ্যার চিত্ত নির্মল হয়ে যায়। তিনি ঠাকুরের চরণে স্বীয় পরিস্থিতি ব্যক্ত করে ক্ষমা ভিক্ষা করেন এবং কীভাবে সবকিছুর প্রায়শ্চিত্ত হবে তাঁর উপায় সন্ধান করেন। ঠাকুর তাঁকে কৃষ্ণনাম উপদেশ করেন। তখন সেই বেশ্যা ঠাকুরের আদেশে নিজের সকল সম্পদ ব্রাহ্মণগণকে বিতরণ করে একবস্ত্রে মুণ্ডিত মস্তকে বেনাপোলেই প্রতিদিন লক্ষ নাম জপের আদর্শ স্থাপন করেন। তখন থেকেই তিনি লক্ষহীরা নামে পরিচিত হন।
বর্তমানে হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ী নামে খ্যাত মন্দিরে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ, গৌরনিতাই, হরিদাস ঠাকুর ও লক্ষহীরা দেবী পূজিত হচ্ছেন। প্রাচীন মাধবীলতা বৃক্ষ, যার নিচে বসে হরিদাস ঠাকুর ভজনা করতেন, তা এখনো দৃশ্যমান। মন্দিরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও হরিদাস ঠাকুরের বিভিন্ন লীলার মিউজিয়াম রয়েছে। শ্রীপাটের অনতিদূরে কাগজপুকুরিয়া নামে একটি স্থান রয়েছে। এটিই রামচন্দ্র খানের বসতভিটা ছিল। একবার যখন পার্ষদগণসহ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু এখানে আগমন করেন, কিন্তু রামচন্দ্র খান তাঁকে অপমান করেন। পরবর্তীকালে সেই অপরাধের ফলে মুসলমানেরা এ গ্রাম আক্রমণ করে। তাঁর বসতভিটায় গোবধ করে অমেধ্য রন্ধন করে এবং সপরিবারে রামচন্দ্র খানকে হত্যা করে। বসতভিটার দর্শনীয় স্মৃতিচিহ্ন নেই বললেই চলে।
পথনির্দেশ
বেনাপোল হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বাংলাদেশ অংশ। ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী বাসে বেনাপোল নেমে রিক্সা, ভ্যান বা হেঁটে এ শ্রীমন্দিরে আসা যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>