শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী

বিন্নাউরি (শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী)

টাঙ্গাইল জেলার বিন্নাউরি গ্রামে বৈষ্ণব সার্বভৌম সিদ্ধ শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের আবির্ভাব। ন্যূনাধিক ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম শ্রীনরহরি নন্দী, পিতার নাম গোপাল নন্দী। তিনি পরমহংসবেশ ধারণপূর্বক শ্রীব্রজমণ্ডল ও শ্রীনবদ্বীপ মণ্ডলে বসবাস করতেন। তিনি সূর্যকুণ্ডে বাসকালে শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজী মহারাজকে বেশগুরু পদে বরণ করেন। বেদান্ত সূত্রের গোবিন্দভাষ্য প্রণেতা শ্রীপাদ বলদেব বিদ্যাভূষণ প্রভুর শিষ্য শ্রীল উদ্ধব দাস বাবাজীর শিষ্য হচ্ছেন শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজী। ব্রজে ও নবদ্বীপে তিনি সিদ্ধবাবা বলে খ্যাত ছিলেন।

শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী
শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী

১৮৮০ সালে শ্রীবৃন্দাবন ধামে শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজীর সাথে সচ্চিদানন্দ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ১৮৯১ সালে আমলাজোড়ায় তাঁদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার ঘটে। শ্রীবিহারী দাসজী নামে এক বলিষ্ঠ সেবক শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের দেখাশোনা করতেন। অনেক বয়স হওয়ায় বাবাজী মহারাজ খঞ্জ হয়ে যান। তাই বিহারীজী তাঁকে একটি ঝুপরিতে করে এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যেতেন।

কিন্তু শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরসহ অন্য সজ্জন ভক্তগণ যখন সংকীর্তন সহযোগে নদীর অপর পাড় শ্রীমায়াপুরে (মহাপ্রভুর প্রকৃত আবির্ভাব স্থান) নিয়ে আসেন, তিনি ‘জয় শচীনন্দন গৌরহরি’ বলে ঝুপড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে উদ্দণ্ড নৃত্য শুরু করেন। যখন শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ কলকাতার রামবাগানস্থ ভক্তিভবনে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সাথে দেখা করতে যেতেন, তখন শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের প্রতি প্রচুর স্নেহ প্রদর্শন করতেন। তিনি শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরকে বৈষ্ণব সিদ্ধান্তানুযায়ী পঞ্জিকা প্রকাশের নির্দেশ দেন। আমরা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের পূর্বে যে পঞ্চতত্ত্ব মহামন্ত্র জপ করি, তিনি-ই এর সন্ধান দেন –

(জয়) শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ \

বাবাজী মহারাজের শ্রীগৌরচরণে বিরল প্রপত্তি ছিল। তিনি বলতেন, “যারা ভজনচতুর হবেন, তাঁরা নবদ্বীপে বাস করবেন। কারণ ব্রজে অপরাধ বিচার রয়েছে, কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু নবদ্বীপে অপরাধ বিচার নেই। দেখ না দুই পয়সার হাঁড়ির জন্য মা যশোদা শ্রীকৃষ্ণকে বেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু নবদ্বীপে নিমাই ঘরের যাবতীয় হাঁড়ি-কুড়ি ভেঙে চাল, ডাল কত কিছু লোকসান করলেন, কিন্তু শচীমাতা তাঁকে কিছুই বললেন না।”

যখন তিনি সংকীর্তনানন্দে মত্ত হয়ে নৃত্য করতেন, তখন তাঁকে শ্রীমন্মহাপ্রভুর ন্যায় আজানুভুজ ন্যাগ্রোধপরিমণ্ডল তনু, চার হাত প্রমাণ দীর্ঘ পুরুষ বলে মনে হতো। তিনি এক লাফ দিয়ে ৫-৬ হাত উপরে উঠতেন। কীর্তনে তাঁর অদ্ভুত ভাবের প্রাকট্য দেখা যেত।

শ্রী জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ ১৮৯৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার শুক্ল প্রতিপদ তিথিতে সকাল ১০টায় অপ্রকট হন। ঠাকুর ভক্তিবিনোদ সজ্জনতোষণীতে এ প্রসঙ্গে লেখেন “বৃদ্ধ সেনাপতি শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহাশয় শ্রীনবদ্বীপ মণ্ডলের অন্তর্গত কোলদ্বীপস্থ ভজনকুটিরে শ্রীধাম লাভ করিয়াছেন। সিদ্ধ বাবাজী মহাশয় গৌরভূমি অন্ধকার করিয়া চিজ্জগতে প্রবেশ করিলেন। আমরা জড়নয়নে তাঁহার আনন্দজনক নৃত্য কীর্তন আর দেখিতে পাইব না। তিনি চিজ্জগতে অবস্থিত থাকিয়া আমাদিগের প্রতি কৃপাবিধান করুন।”- সজ্জনতোষণী, ২য় বর্ষ, ২য় পৃষ্ঠা।

পূর্বে বিন্নাউরিতে একটি বড় আখড়া ছিল। এখন বাবাজী মহাশয়ের বংশধরেরা সকলে ভারতেই অবস্থান করছেন।

পথনির্দেশ

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে টাঙ্গাইল নেমে, সেখান থেকে টেম্পোতে করে ১০ কিলোমিটার দূরে কলাতলা বাজারের পাশে এ শ্রীপাটে আসা যায়।

আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>

Share on

Facebook
Twitter
LinkedIn