শ্রী মুরারী গুপ্ত

গোয়ালাবাজার (শ্রী মুরারী গুপ্ত)

শ্রী মুরারী গুপ্ত ছিলেন  শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর  বাল্যকালের অন্যতম পার্ষদ। শ্রীশ্রী গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধানমতে, তাঁর আবির্ভাব শ্রীহট্টের গোয়ালাবাজারে।

ভবরোগ বৈদ্য মুরারি নাম যাঁর।
‘শ্রীহট্টে’ এই সব বৈষ্ণবের অবতার \ (চৈ.ভা. আদি ২.৩৫)

পরবর্তীকালে তিনি নবদ্বীপে চলে যান। মহাপ্রভু বাল্যকালে তাঁর সাথে বিবিধ নর্ম লীলাদি সম্পাদন করতেন। তিনি জাতিতে বৈদ্য ছিলেন। তিনি যাঁর চিকিৎসা করতেন, তাঁর দেহরোগ ও ভবরোগ দুই-ই ক্ষয় হতো।

একদিন শ্রী চৈতন্যদেব মুরারী গুপ্তকে বলেন, “তোমার শুধু কৃষ্ণের পূজা করা উচিত, কারণ তিনি পরমেশ্বর ভগবান; রাম অবতারেরও আদি উৎস।” মুরারী গুপ্ত সারারাত কৃষ্ণকে স্মরণ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাঁর মনে বারবার শ্রীরামচন্দ্রের রূপ প্রকটিত হচ্ছিল। তিনি রামচন্দ্রের প্রতি খুবই অনুরক্ত ছিলেন। শ্রীচৈতন্যদেবের আদেশ পালন করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু রামচন্দ্রের প্রতি তাঁর এতই ভক্তি ছিল যে তিনি কোনোভাবেই কৃষ্ণের প্রতি একাগ্র হতে পারছিলেন না।

শ্রী মুরারী গুপ্ত
শ্রী মুরারী গুপ্ত

পরদিন সকালে শ্রীচৈতন্যদেব এসে দেখলেন, তাঁকে খুবই অন্যমনস্ক আর অবসন্ন দেখাচ্ছে। মহাপ্রভু জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কী হয়েছে?” মুরারী গুপ্ত উত্তর দিলেন, “তুমি আমাকে বলেছো শুধু কৃষ্ণের পূজা করতে, কিন্তু আমি সব সময় রামচন্দ্রকে নিয়েই ভাবি। আমি তোমার আদেশ পালন করতে পারছি না, তাই আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার মনে হয়, তোমার আদেশ পালন না করার শাস্তিস্বরূপ আমার জীবন গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া উচিত।”

তখন শ্রীচৈতন্যদেব তাঁকে আলিঙ্গন করে বললেন, “কোনো সমস্যা নেই, তুমি রামচন্দ্রের একজন শুদ্ধ ভক্ত।” পরবর্তী সময় মহাপ্রকাশ লীলায় মহাপ্রভু প্রকাশ করেন যে, শ্রী মুরারী গুপ্ত আসলে হনুমান ছিলেন। সে কারণে তিনি সব সময় রামচন্দ্রের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। ভগবানের অবতারসমূহের লীলা চিন্তা করে মুরারী গুপ্ত বিচার করেন যে, ভগবৎ অবতারগণ লীলা প্রকট করে আবার লীলা সঙ্গোপন করেন। তাই মহাপ্রভু কবে লীলা অপ্রকট করেন, তার ঠিক নেই। সে দৃশ্য দেখার পূর্বেই তিনি যেন নিজ দেহ নাশ করতে পারেন, সেজন্য একটি শাণিত কাটারি এনে ঘরে রাখলেন। পরদিন অন্তর্যামী মহাপ্রভু তাঁর কাছে এসে কাটারিখানি চেয়ে নিলেন, বললেন এ দেহটি তোমার নয়।

নবদ্বীপে তাঁর নিবাস ছিল পৃথু কুণ্ড বা বল্লালদীঘির পূর্ব তীরে। তাঁর সীতা-রাম-লক্ষ্মণ-হনুমানের শ্রীবিগ্রহ ছিল। সেই বিগ্রহ আজও সেখানে সেবিত হচ্ছে। তিনি বাল্যকালে মহাপ্রভুর যেসব লীলা দর্শন করেছিলেন, তা সংস্কৃত কড়চা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। এ গ্রন্থটিই শ্রীচৈতন্য ভাগবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের মূল উপজীব্য।

পথনির্দেশ

সিলেট থেকে মৌলভীবাজারগামী বাসে ৩০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালাবাজার স্টপেজে নেমে সেখান থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্ব। স্থানীয় বর্ণনা মতে মুরারী গুপ্তের জন্মস্থান ভিটাতে এখন অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাস। এখনো সেই গ্রামে মুরারী গুপ্ত বংশীয়রা বাস করছেন।

আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>

Share on

Facebook
Twitter
LinkedIn