চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার জারগ্রাম যে গৌরপার্ষদদের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছে, তিনি হচ্ছেন নিত্যানন্দ প্রভুর প্রিয় পার্ষদ শ্রীল ধনঞ্জয় পণ্ডিত। তার সম্পর্কে শ্রীগৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় আছে- “বসুদাম সখায়শ্চ পণ্ডিতঃ শ্রীধনঞ্জয়।”
অর্থাৎ পূর্বলীলায় বলরামের প্রিয় পার্ষদ দ্বাদশ গোপালের অন্যতম বসুদাম সখাই ধনঞ্জয় পণ্ডিতরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি বাংলা ১৩০৬ সালে চৈত্রী শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে জারগ্রাম নিবাসী শ্রীপতি বন্দোপাধ্যায়ের সতীসাধ্বী পত্নী শ্রীমতী কালিন্দী দেবীর কোল আলো করে ভূমিষ্ট হন। ছোটবেলা থেকেই ধনঞ্জয় পণ্ডিত অত্যন্ত ভক্তিমান ছিলেন।
তিনি ত্রি-সন্ধ্যা তুলসী দেবীকে প্রণাম-পরিক্রমা করতেন। পিতা মাতা তাদের এ পুত্রটিকে অল্প বয়সেই হরিপ্রিয়া নামে অতি সুন্দরী এক কন্যার সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু তিনি বৈরাগ্য পরায়ণ ছিলেন। কিছুদিন পরেই গৌরহরির চরণপদ্ম স্মরণ করে তীর্থ পর্যটনের উদ্দেশ্যে নবদ্বীপ আসেন। পিতৃপ্রদত্ত সমস্ত অর্থ গৌরহরির চরণে সমর্পণ করেন। এ সম্পর্কে বৈষ্ণব বন্দনা গীতিতে রয়েছে
বিলাসী বৈরাগী বন্দো পণ্ডিত ধনঞ্জয়।
সর্বস্ব প্রভুরে দিয়া ভাণ্ড হাতে লয় \
আরো তীর্থ স্থান দেখতে নিত্যানন্দ প্রভুর আদেশে মহাপ্রভুকে দর্শন করে তিনি শীতলগ্রাম যান। সেখানে তিনি শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রী গোপীনাথের সেবা প্রকট করেন। বহু দস্যু ও পাষণ্ডদের উদ্ধার করেন। এরপর তিনি সাঁচড়া পাঁচড়া হয়ে বৃন্দাবন গমন করেন। বৃন্দাবন ধামে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি জলন্দি গ্রামে আসেন। সেখানে সেবা প্রকাশ করে তিনি পুনরায় শীতলগ্রামে ফিরে যান। জারগ্রাম, শীতলগ্রাম, সাঁচড়া ও জলন্দী এ চার স্থানই তার শ্রীপাট নামে পরিচিত। শ্রীচৈতন্যভাগবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতসহ বিভিন্ন গ্রন্থে তার মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। তিনি নিত্যানন্দগত প্রাণ ছিলেন।
তিনি শীতল গ্রামেই অপ্রকট হন। তার সমাধিও সেখানেই রয়েছে। শ্রীপাটে প্রবেশ পথের বামে শ্রীতুলসী দেবীকেই ধনঞ্জয় পণ্ডিতের সমাধি বলা হয়। শীতল গ্রামে এখনও তার সেবিত শ্রী গৌরাঙ্গ ও শ্রীগোপীনাথ সেবিত হচ্ছেন। এছাড়া জারগ্রামের মন্দিরেও ১০৮টি শিবলিঙ্গ সেবিত হচ্ছেন।
পথনির্দেশ
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে ন-পাড়াগামী বাসে ন-পাড়া পথেরহাট নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ন-পাড়া কলেজের সামনে এই শ্রীপাটে আসা যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>