হিরণ্যকশিপুকে বধ করে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করার জন্যে ভগবান নৃসিংহ দেব এই দিনে আবির্ভূত হন। নৃ অর্থাৎ মানুষ এবং সিংহ এই দুটি শব্দ একসাথে মিলে হয়েছে নৃসিংহ । ব্রহ্মার দ্বারা বিশেষ বরপ্রাপ্ত হিরণ্যকশিপুকে বধ এবং ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তিনি এই অর্ধ নর এবং অর্ধ সিংহের মত বিশেষ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন । শ্রী নৃসিংহ দেব ভক্তদের ভক্তিজীবনের বিঘ্নসমূহ নাশ করেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতের ৭/৮/৫১ শ্লোকের তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন : সাধু ভক্তদের চিত্তে উপদ্রব সৃষ্টিকারী অসুরদের বধ করার জন্য নরহরি বা নৃসিংহ দেব রূপে ভগবান সর্বদা প্রস্তুত থাকেন । সারা পৃথিবীজুড়ে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন প্রচার করার জন্য ভক্তদের বহু বিপদ এবং প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু ভগবানের প্রতি ঐকান্তিক ভক্তিপরায়ন বিশ্বস্ত সেবকের জানা উচিত যে, ভগবান নৃসিংহদেব সর্বদাই তাদের রক্ষা করেন ।
নৃসিংহ চতুর্দশী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং নৃসিংহ দেবের মহিমা শ্রবণ ও কীর্তন করে অত্যন্ত আনন্দের সাথে দিনটি উদযাপনের জন্যে পৃথিবী জুড়ে ইসকন মন্দির গুলোতে ভক্তগণ দলে দলে যোগদান করেন। এ দিনটিতে শ্রীমদ্ভাগবত প্রবচনে নৃসিংহদেবের লীলাসমূহ বর্ণনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় । সন্ধ্যায় বিভিন্ন প্রকার ফলের রস, ডাবের জল, গঙ্গা জল এবং চন্দন দিয়ে ভগবান নৃসিংহ দেবের বিগ্রহের মহাভিষেক করা হয় ।
অনেক ভক্তের সাথে নৃসিংহ দেবের বিভিন্ন অলৌকিক লীলা রয়েছে । তাই ভক্তরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসাহিত হয়েই এ অভিষেকে অংশগ্রহণ করেন । আরতির পর ভক্তদের মাঝে অনুকল্প (একাদশীর মত) প্রসাদ বিতরণ করা হয় ।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার নবদ্বীপ – ভাব – তরঙ্গ গ্রন্থে গৌড়িয় বৈষ্ণবদের নৃসিংহ পূজার গুরুত্ব আরোপ করে লিখেছেন – আমার হৃদয় পরিশুদ্ধ করে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণের সেবার মানসিকতা প্রদান করার জন্য এভাবে আমি ভগবান নৃসিংহ দেবের নিকট প্রার্থনা করি । ভক্তরা নৃসিংহ দেবের আশ্রয়ে এরূপ ভক্তি লাভের জন্যে অভিলাষ করেন ।