শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতৃদেব শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের আবির্ভাব বাংলাদেশের শ্রীহট্টে বা সিলেট জেলার ঢাকা দক্ষিণে। তিনি বাৎস্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ। তাঁর পিতা উপেন্দ্র মিশ্র। উপেন্দ্র মিশ্রের স্ত্রীর নাম শ্রীমতি শোভাদেবী। তাঁর সাত পুত্র, যথা কংসারি, পরমানন্দ, পদ্মনাভ, সর্বেশ্বর, জগন্নাথ, জনার্দন ও ত্রৈলোক্যনাথ। এ সাত পুত্রের মধ্যে শ্রীজগন্নাথ মিশ্রই নবদ্বীপে এসে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
আর মহাপ্রভুর মাতামহ ছিলেন নীলাম্বর চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন মহাজ্যোতিষী। তাঁকে মহামুনি গর্গ ও যশোদার পিতা সুমুখ গোপের অবতার বলা হয়। তিনিও শ্রীহট্টে আবির্ভূত হন। তাঁর সহধর্মিনীর নাম বিলাসিনী দেবী। তাদের দু’টি পুত্র যোগেশ্বর পণ্ডিত ও রত্নগর্ভ আচার্য। শচীদেবী ও সর্বজয়া দেবী নামে দু’টি কন্যা। শ্রীহট্টে মুসলমানদের ব্যাপক আধিপত্য সৃষ্টির ফলে স্থানীয় ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-বৈদ্য সজ্জনগণ সমাজ স্থান ত্যাগ করে ভাগীরথী গঙ্গার তীরে নবদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তিনি তখন নদীয়া জেলার বেলপুকুরে বসতবাড়ি তৈরি করেন। সেখানে তাঁর সেবিত ১৭০০ বছরের পুরনো বিগ্রহ শ্রীমদনগোপালের সেবা এখনো বিদ্যমান।
শ্রীজগন্নাথ মিশ্র নবদ্বীপে পাঠ সমাপন করে নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শ্রী শচীদেবীকে বিবাহ করে নবদ্বীপেই বসবাস শুরু করেন। আর সর্বজয়া দেবীর স্বামী চন্দ্রশেখর আচার্যও নবদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। চন্দ্রশেখর আচার্যের আবির্ভাব শ্রীহট্টে। স্থানীয় ইতিহাস হতে জানা যায়, তিনি কিছুদিন বাকলা চন্দ্রদ্বীপে বসবাস করেন। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল নামক একটি অখ্যাত গ্রন্থ হতে জানা যায়, জয়পুর বা শচীঅঙ্গন শ্রীমন্মহাপ্রভুর মাতৃদেবীর আবির্ভাব স্থান।
তরপ দেশের মধ্যে জয়পুর নামে গ্রাম।
সর্বসুখময় স্থান ক্ষিতি অনুপাম \
সে বিচারে তরপ দেশ বর্তমানে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানা। বাহুবল থানায় জয়পুর নামে একটি বৃহৎ গ্রাম রয়েছে। সেটিই নীলাম্বর চক্রবর্তীর আবির্ভাব স্থান এবং যোগেশ্বর ও শচীদেবীর আাবর্ভাব সেখানেই। তবে শ্রীনীলাম্বর চক্রবর্তীর প্রাচীন বসতভিটার কোনো নিদর্শন নেই।
পথনির্দেশ
ঢাকা – সিলেট বাইপাস রোডে হবিগঞ্জের বাহুবল বা মিরপুর নেমে জয়পুর যাওয়া যায়। অপরদিকে শ্রীমঙ্গল রোডে সরাসরি জয়পুর নামা যায়। ট্রেনে যাবার ইচ্ছে থাকলে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে মিরপুরের বাস বা অটোরিক্সা পাওয়া যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>