অশেষ করুণানিধি শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু কোনো যোগ্যতা বিচার না করেই পাত্রাপাত্রে প্রেমধন বিতরণের জন্য বিখ্যাত। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুরই এক শিষ্য পাথর হাজং পাহাড়িয়া, বর্বর জাতি। প্রভু তাঁর নাম রাখেন ‘জগন্নাথ দাস’।
পাথর হাজংয়ের জন্মস্থান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি গারো পাহাড়ে। গভীর জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় গারো, কুচ, ভানু, বলাই, হাজং প্রভৃতি উপজাতির বসবাস। পাহাড়ে থেকেই জীবিকা নির্বাহ করে তাই এদের গায়ে অসীম শক্তি। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কোনো কারণে প্রচণ্ড বিবাদ হয় পাথর হাজংয়ের। এ জন্য প্রচণ্ড মর্মবেদনা ও আত্মগ্লানিতে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গভীর রাত্রিকালে তিনি বের হলেন। তখন ছিল আনুমানিক ১৫১৮ সাল। দৈববাণী এলো “হে পাথর! তুমি কেন দুঃখকষ্টে আত্মহত্যা করবে? পতিতপাবন নিত্যানন্দ প্রভু ও মহাবদান্য শ্রীগৌরসুন্দর এখন পুরীতে অবস্থান করছেন। সেখানে গিয়ে তাদের চরণে আত্মসমর্পণ করে ধন্য হও।”
পুরীতে এসে পাথর হাজং তাঁর প্রাণের ঠাকুরদ্বয়ের খোঁজ করতে থাকল। তখন ছিল রথযাত্রার সময়। পাথর দেখলেন রথযাত্রা হচ্ছে, আর তার সামনেই এক দিব্যপুরুষ নৃত্য করছেন। পাথর সেই পুরুষটিকেই তার প্রাণের ঠাকুর জানলেন আর সেই কীর্তনে নৃত্য করতে করতে প্রেমাবেশে বাহ্য হারা হয়ে গেলেন।
শ্রীবাস ঠাকুর পাথরের প্রেম দেখে ভাবলেন-“ঐ ভক্ত কে?” মহাপ্রভু তখন নিত্যানন্দ প্রভুর দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি পাথরকে কোলে নিয়ে আলিঙ্গন করলেন। পাথরের প্রাণ একেবারে জুড়িয়ে গেল। তারপর সমুদ্র স্নান করে এলে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু তাঁকে দীক্ষা প্রদান করেন।
কিছুকাল পুরীতে থাকার পর পাথর শ্রীনিত্যানন্দের আজ্ঞায় পুনরায় স্বদেশ গমন করেন ও সেখানে হরিনাম প্রচার করেন। পাথর হাজং দেশে গিয়ে গ্রামের নিকটে একটি তুলসী মঞ্চ নির্মাণ করে সাত দিন অনাহারে-অনিদ্রায় উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম করতে থাকেন। তাঁর ভাব দর্শনে গ্রামবাসী আকৃষ্ট হয় এবং অল্পদিনের মধ্যে ঐ পাথরজাতি দলে দলে এসে পাথরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে হরিনাম করতে থাকেন। সকলেই শ্রীমূর্তিরও সেবা শুরু করে। কিন্তু বিধির কী নির্মম পরিহাস! কালের আবর্তে সেই স্থান আজ লুপ্ত।
শ্রীগৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান প্রদত্ত ঠিকানা অনুযায়ী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানায় ধোপাকুঁড়া গ্রামটি অবস্থিত। এখানেই পাথর হাজংয়ের বংশধরদের নিবাস ছিল। কিন্তু ১৯৬০ সালের দাঙ্গার সময় তাঁরা এ স্থান ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীকালে দলে দলে আরো হাজং গোষ্ঠী ভারতে চলে যায়। ধোপাকুঁড়া গ্রামটি এখন নবাগত মুসলিমদের দখলে। ধোপাকুঁড়া বাজারটিই পূর্বে হাজংপল্লী ছিল। এখন আমবাগান ও দাউধারা গ্রামে কিছু হাজং দেখা যায়। এদের আচার-আচরণ ও ভক্তি দেখে পূর্বের ঐতিহ্য সহজেই অনুমেয়। এরা এখনো হরিনাম ও হরিকথাতে খুব আকৃষ্ট। উল্লেখ্য যে, শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদ ঠাকুরও জীবদ্দশাকালে এ হাজং জাতির মাঝে কৃষ্ণভক্তি প্রচার করেন।
পথনির্দেশ
শেরপুর শহর থেকে অটোরিক্সায় করে শেরপুর-নালিতাবাড়ি সড়কের তিনআনি বাজার থেকে ধোপাকুঁড়ায় সহজেই যাওয়া যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>