পরমহংস শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ ফরিদপুর জেলার অর্ন্তগত টেপাখোলার কাছে পদ্মানদীর তটবর্তী ‘বাগযান’ নামক গ্রামে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাব অষ্টাবিংশ শতাব্দীতে। তাঁর পিতা-মাতার নাম জানা যায় নি। বাবাজী মহারাজের পিতৃ প্রদত্ত নাম ছিল ‘বংশী দাস’।
সমাজের তৎকালীন প্রথানুসারে পিতামাতা ছোটবেলায় বংশীদাসের বিবাহ দিলেও তিনি সর্বদা সংসারবিরক্ত ও ভগবদ্বিরহ-বিহ্বল অবস্থায় গৃহে অবস্থান করতেন। তিনি শস্য ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২৯ বৎসর পর্যন্ত সংসারবাস করেন। পত্নীবিয়োগের পর তিনি কঠোর বৈরাগ্যের সাথে বিবিক্তানন্দীরূপে ভগবদ্ভজনের জন্য শ্রীবৃন্দাবন ধামে চলে যান। সেখানে শ্রীল ভাগবত দাস বাবাজী মহারাজের নিকট পরমহংস বাবাজী বেশ গ্রহণকরত শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ নাম ধারণ করেন। শ্রীল ভাগবত দাস বাবাজী মহারাজ বৈষ্ণব সার্বভৌম শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের বেষ-শিষ্য ছিলেন।
বেষাশ্রয়ের পর শ্রীল বাবাজী মহারাজ ত্রিশ বছর পর্যন্ত ব্রজমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে কঠোর ভজন করেন। অবশ্য মাঝে মাঝে তিনি উত্তর ভারত ও শ্রীগৌড়মণ্ডলের তীর্থসমূহ দর্শন করতেন। তীর্থ পর্যটনকালে বাবাজী মহারাজের সাথে শ্রীক্ষেত্রে শ্রীস্বরূপদাস বাবাজী, কালনায় শ্রীভগবান দাস বাবাজী ও কুলিয়ায় শ্রীচৈতন্য দাস বাবাজীর সাক্ষাৎকার হয়েছিল। এ ছাড়া ব্রজমণ্ডলের সকল মহাত্মার সাথে তাঁর পরিচয় ছিল। গৌরকিশোর দাস বাবাজী সর্বদা দুঃসঙ্গ বর্জনপূর্বক একাকি শুদ্ধভজনে কালাতিপাত করতেন।
১৩০০ বঙ্গাব্দে ফাল্গুন মাসে যখন শ্রীমন্মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থলী শ্রীমায়াপুর যোগপীঠের প্রকাশ হয়, শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের নির্দেশক্রমে তিনি শ্রীব্রজমণ্ডল হতে শ্রীগৌড়মণ্ডলে এসে অপ্রকটকাল পর্যন্ত শ্রীমন্মহাপ্রভুর লীলাস্থলী শ্রীনবদ্বীপমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছিলেন।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে গোদ্রুমদ্বীপে (স্বরূপগঞ্জে) পুণ্যতোয়া সরস্বতী (খড়িয়া) নদীর তীরে ‘স্বানন্দসুখদকুঞ্জ’ নামে নিজ ভজনকুঞ্জ নির্মাণ করেন। সেখানে ঠাকুর মহাশয় প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ ও ব্যাখ্যা করতেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর ১৮৯৮ সালে শীতকালে সর্বপ্রথম বাবাজী মহারাজের দর্শন পান। সেই দিন স্বরূপ-রূপানুগবর পরমহংস শ্রীগৌরকিশোর প্রভু শ্রীবার্ষভানবীদেবীর উদ্দেশ্যে অত্যন্ত দৈন্য জ্ঞাপন করে কাতরকণ্ঠে গান করতে করতে স্বানন্দসুখদকুঞ্জে উপস্থিত হয়েছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ উক্ত গানটি লিখে রাখায় পরবর্তীকালে ভক্তগণ তা পেয়ে কৃতার্থ হন।
ইংরেজি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের নির্দেশক্রমে গোদ্রুমে স্বানন্দসুখদকুঞ্জে শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। বাবাজী মহারাজের একমাত্র শিষ্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী।
বাবাজী মহারাজ অপ্রকটের পূর্বে কুলিয়ায় রানীর ধর্মশালায় থাকতেন। ১৩২২ বঙ্গাব্দের ১ অগ্রহায়ণ (১৯১৫ সালের ১৭ নভেম্বর) উত্থান-একাদশী তিথিতে শেষরাতে পরমহংস শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ নিত্যলীলায় প্রবেশ করেন।
বাংলাদেশের মানচিত্রে ফরিদপুর সদর থানায় টেপাখোলা ইউনিয়ন দেখা যায়। তবে বাগযান গ্রামের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো গ্রামটি বহু পূর্বেই পদ্মার ভাঙনে হারিয়ে গেছে।
পথনির্দেশ
ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী বাসে ফরিদপুরে যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশাযোগে টেপাখোলা যাওয়া যায়।
আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>