সোনাতলা (কালা কৃষ্ণ দাস)

সোনাতলা বর্তমান পাবনা জেলার সাথিয়া থানার ইছামতি নদীর পাশে অবস্থিত। সোনাতলা বেশ লম্বাগ্রাম। এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ কালা কৃষ্ণ দাসের প্রচার ক্ষেত্র।

কালাকৃষ্ণ দাস ব্রজলীলায় দ্বাদশ গোপালের অন্যতম শ্রী লবঙ্গ সখা ছিলেন। তিনি গৌরলীলা পুষ্টির জন্য আকাইহাটে প্রকটিত হন। তিনি বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ বংশে ভরদ্বাজ গোত্রে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শ্রীল ব্ন্দৃাবন দাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্য ভাগবতে উল্লেখ করেছেন যে-

প্রসিদ্ধ কালা কৃষ্ণ দাস ত্রিভুবনে।
গৌরচন্দ্র লভ্য হয় যাহার স্মরণে \
(চৈ. ভা. আদি. ৫/৭৪০)

কালা কৃষ্ণ দাস অত্যন্ত সরল প্রকৃতির ভক্ত ছিলেন। মহাপ্রভু যখন দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন, তখন সার্বভৌম ভট্টাচার্য প্রভুর সেবার জন্য কালাকৃষ্ণ দাসকে সঙ্গে দিয়েছিলেন।

কালাকৃষ্ণ দাস নাম শুদ্ধ কুলীন ব্রাহ্মণ।
যারে সঙ্গে লইয়া কৈল দক্ষিণ গমন \

দক্ষিণ ভারত ভ্রমণকালে মহাপ্রভু মল্লার দেশে বোতাপনিক নামক স্থানে রঘুনাথ জিউ মন্দির দর্শন করে রাত্রিযাপন করেন। ঐ অঞ্চলে তখন ভট্টথারী নামক বামাচারী সন্ন্যাসী সম্প্রদায় বাস করত। যারা স্ত্রী ও মদ নিয়ে তান্ত্রিক মতে সাধন করত। তারা কালা কৃষ্ণ দাসকে স্ত্রী ও ধন দেখিয়ে বুদ্ধিভ্রষ্ট করে তাদের গৃহে নিয়ে গেল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কালাকৃষ্ণ দাসকে না দেখতে পেয়ে ভট্টথারীদের গৃহে গিয়ে তাদের বলেন, ‘তোমরা সন্ন্যাসী, আমিও সন্ন্যাসী তবে তোমরা কেন আমার সেবককে ধরে নিয়ে এসেছ।’ তখন ভট্টথারীরা মহাপ্রভুকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে আসলে, তারা নিজেরাই সেই অস্ত্রের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কান্না করতে লাগলেন।

তখন মহাপ্রভু কালাকৃষ্ণ দাসের চুল ধরে নিয়ে এলেন। পরে পুরীতে ফিরে এসে মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন, “এই নাও তোমার কালাকৃষ্ণ, আমি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি, এখন এর দায়দায়িত্ব আমি নেব না। সে যেন আমার কাছে না আসে।” তখন কালাকৃষ্ণ দাস অঝোরে কান্না করতে থাকেন। পরবর্তীকালে নিত্যানন্দ প্রভু সার্বভৌমসহ অন্যান্য ভক্তগণের সাথে পরামর্শ করে মহাপ্রভুর দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সংবাদ প্রেরণের জন্য জগন্নাথের প্রসাদ এবং প্রসাদী বস্ত্র দিয়ে বঙ্গ দেশে পাঠিয়ে দেন।

বঙ্গদেশে ফিরে এসে কালাকৃষ্ণ দাস শচীমাতা, অদ্বৈতাচার্য প্রভু, শ্রীবাস ঠাকুর, চন্দ্রশেখর আচার্য প্রভৃতি ভক্তগণের কাছে মহাপ্রভুর দক্ষিণ দেশ ভ্রমণের বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন। তারপর কাটোয়ার নিকটে আকাইহাটাতে এসে বসতি করেন। কিন্তু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তাঁর অনুভাষ্যে উল্লেখ করেছেন, আকাইহাটের কালাকৃষ্ণ দাস ও দক্ষিণ ভারতের ভ্রমণসঙ্গী কালাকৃষ্ণ দাস পৃথক ব্যক্তি। পরবর্তীকালে কালাকৃষ্ণ দাস ঠাকুর হরিনাম প্রচারের জন্য আকাইহাট হতে পাবনা জেলার সাথিয়া থানার ইছামতি নদীর তীরে সোনাতলা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তাঁর জ্ঞাতিগণও এখানে বসতি স্থাপন করেন।

এ স্থানে তিনি বিবাহ করেন এবং মদনমোহন দাস নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, পুত্র বড় হলে সেই পুত্রের ওপর এখানকার ভার অর্পণ করে সস্ত্রীক বৃন্দাবনে গমন করেন। বৃন্দাবনে গৌরাঙ্গ দাস কালা কৃষ্ণ দাসের অপর একটি পুত্রের জন্ম হয়, কালাকৃষ্ণ দাস বৃন্দাবনে গোবিন্দ জীউর অনুরূপ কালাচাঁদ বিগ্রহ নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গ দাসকে কালাচাঁদ বিগ্রহ দিয়ে সোনাতলা পাঠিয়ে দেন। তারা দুই-ভাই-পরমানন্দে কালাচাঁদের সেবা করেন। তাদের বংশধরেরা ক্রমান্বয়ে সেই বিগ্রহের সেবা করতেন।

বর্তমানে শ্রী কালাকৃষ্ণ দাসের আশ্রম বাটীর ভিটা, মন্দিরের ইট এবং পুকুরের ঘাট দেখা যায়। এখন আর সেই বিগ্রহ নেই এবং কালাকৃষ্ণ দাসের বংশধর শ্রীগুরু গোবিন্দ গোস্বামী তাঁর শিষ্যকে সেই ভিটা দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে অপ্রকট হন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর যখন সোনাতলায় আসেন, তখন গুরুগোবিন্দ গোস্বামীর পিতা বিজয়গোবিন্দ গোস্বামী জীবিত ছিলেন। স্থানীয় বাজারের পিছনে এখনও সেই ভিটা কালাঠাকুরের ভিটা নামে গ্রামবাসীদের নিকট পরিচিত।

পথনির্দেশ

ঢাকা থেকে পাবনাগামী বাসে বেড়া সি এন্ড বিতে নামতে হবে অথবা সাঁথিয়া নেমে সেখান থেকে আবার নসিমন যোগে সোনাতলা যাওয়া যায়।

আরো তীর্থ স্থান দেখতে ক্লিক করুন>>

Share on

Facebook
Twitter
LinkedIn